জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। ছাত্র জনতার সংগ্রামের ফসল অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি আন্তরিক অভিনন্দন ও সাফল্য কামনা করছি।
সারাদেশে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত চলমান সকল নন এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভুক্তের জন্য সম্প্রতি ৬৪ জেলায় একযোগে ২৫/০৯/২০২৪ ইং তারিখে জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ও শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছে নন এমপিও শিক্ষকরা। কর্তৃকবাদী সরকারের পতন হলে দেশের অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে জনাব ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুসের উপর গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। পতিত সরকারের চরম বৈষম্যের শিকার নন এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করলেও বর্তমানে নতুন আশা সঞ্চারিত হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, দীর্ঘদিনের মানবেতর জীবনযাপনের অবসান ঘটিয়ে বর্তমান সৃজনশীল সরকার নন এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীদের মুখে হাসি ফোটাবেন। তাহলে নন এমপিও শিক্ষক কর্মচারীরা পরিবার পরিজন নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারব। নন এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সরকারী বিধি বিধান অনুযায়ী পরিচালিত হয় এবং সরকারের সকল আদেশ নির্দেশ পালনে বদ্ধপরিকর। অথচ এমপিওর দাবীতে ঢাকায় সভা-সমাবেশ, মানববন্ধনের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতেও পিপার স্প্রে, জলকামান, টিয়ারশেল এমনকি লাঠিচার্জ করে শিক্ষক কর্মচারীদের তাড়িয়ে দিয়েছিলো বিগত স্বৈরাচারী সরকার। দেখা গেছে, শিক্ষাকারিকুলাম এবং শিক্ষার্থীদের পাঠদান প্রক্রিয়ায় সরকারী এমপিও, নন এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিন্ন হওয়া সও্বেও শুধুমাত্র নন এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীগণ বেতন ভাতা থেকে বঞ্চিত ২০-২৫ বছর থেকে এবং চরমভাবে বৈষম্যের শিকার সংশ্লিষ্ট শিক্ষক কর্মচারীরা। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের বয়স ২৫ বছর বা তার চেয়েও বেশি। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী বীনা বেতনে অবসরে গেছেন যা জাতির জন্য লজ্জার। কেউ কেউ বেতনবিহীন অবস্থায় রোগে শোগে মৃত্যুবরণও করেছেন। এমপিওভুক্ত একটি চলমান প্রক্রিয়া। সরকার প্রতিবছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুকৃত করাবেন। দুঃখের বিষয় বিগত সরকার নির্বাহী আদেশে কিছু সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক বিবেচনায় শর্তশিখিল পূর্বক এমপিও ভুক্ত করেছেন। প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকার পরেও অনেক নন এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও থেকে বঞ্চিত করেছেন। প্রতিবছর নন এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির বাজেট থাকলেও অদৃশ্য কারণে এমপিওভুক্ত বন্ধ রাখা হয়। নন এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যক্ষ মমিনুল ইসলাম বলেন, সারাদেশে ২ হাজারের মতো স্বীকৃতপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নন এমপিও আছে। প্রতিপ্রতিষ্ঠানে যদি ১০ জন করে শিক্ষক-কর্মচারী হিসেব করা হয়, ২০ হাজারের মতো শিক্ষক-কর্মচারী আছে। কেন্দ্রীয় কমিটির আহবায়ক অধ্যক্ষ দবিরুল ইসলাম বলেন, বিগত সরকারের মতো প্রায় ২০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীদের অবহেলা না করে বৈষম্য দূর করতে এমপিভুক্ত করা দরকার। এ ব্যাপার পঞ্চগড় জেলা নন এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী পরিষদের সভাপতি কফিউল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক জসিমউদদীন খান বলেন, জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ও শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছি, আশা করি চকমান সরকার আমাদের দাবীটি বিবেচনা করবেন। বোদা উপজেলা শিক্ষক কর্মচারী পরিষদের উলিপুখুরী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসিরউদ্দিন, মাঝগ্রাম নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকা রোজিনা বেগম বলেন, বয়সের কারণে এমপিওভুক্ত হলেও ৮-১০ বছরের বেশি চাকুরীর করতে পারব না। তাই আমাদের মানবেতর জীবনযাপন থেকে মুক্তি দিতে এমপিভুক্ত করা জরুরী। তেঁতুলিয়া দাখিল মাদরাসার সুপার মোজাফফর হোসেন বলেন, আমরা চাকুরী চাই না। প্রতিষ্ঠান আমাদের চাকুরী দিয়েছে, শুধুমাত্র এমপিও চাই। বেতনবিহীন শিক্ষক-কর্মচারীদের (নন এমপিও) দূর্ভোগ, দূর্দশা, বৈষম্যের কথা বিবেচনা করে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সকল নন এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল,কলেজ, কারিগরি, মাদ্রাসা ও ডিগ্রি কলেজ) একযোগে দ্রুত সময়ের মধ্যে এমপিওভুক্তির ব্যবস্থা করতে। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ও শিক্ষা উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
বিগত দিনে মিড়িয়ায় দেখা গেছে, নন এমপিও শিক্ষক কর্মচারীরা কোথাও কুলি, দিনমুজুর, ইটের খোয়া ভাংগা ও রাজমিস্ত্রী সহ জীবিকা নির্বাহের জন্য বিভিন্ন কাজে লিপ্ত হয়েছে। যা দেশের জন্য লজ্জার। অন্তবর্তীকালীন সরকার একযোগে সারাদেশের সকল নন এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের মানবেতর জীবনযাপন থেকে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
লেখক
মোঃ তোফাজ্জল হোসেন
সিনিয়র সাংবাদিক ও প্রধান শিক্ষক, বোদা পৌর আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়।