আজ কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদ এর ৩৭ তম মৃত্যু বার্ষিকী

  • সম্পাদকীয়
  • প্রকাশের সময় : ০৬:৪২:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪
  • ৫৫ বার পঠিত

xr:d:DAFOhqWgFiY:2,j:37504594232,t:22100906

কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদের জন্ম পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার জমাদারপাড়া গ্রামে। তাঁর ডাকনাম ছিল বাদল । রাজনৈতিক ছদ্মনাম ছিল কমরেড কবির। তাঁর পিতা আহমেদ সাফাকাত আল বারি ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক। পড়াশোনা করেছেন দিনাজপুর শহরে। ইংরেজি, আরবি, ফার্সি ও উর্দু প্রভৃতি ভাষায় তার দখল ছিল। তার পূর্বপুরুষ শাহ্ বংশীয় পীরে কামেল কদম আলী শাহ্ জলপাইগুড়ি থেকে আগমন করেন । কমরেড ফরহাদরা মোট ৬ ভাই- বোন। তিনি পিতা মাতার মধ্যম পুত্র ও পঞ্চম সন্তান।

তাকে বলা হতো ‘বাংলার লেনিন’। তিনি রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। চল্লিশ দশকের বিশ্ব রাজনীতিতে ঘটে যাওয়া ভারতের স্বাধীনতা, চীনের বিপ্লব এবং ১৯৪৮ সালের দিকে দিনাজপুরের তেভাগা আন্দোলন তার রাজনৈতিক মতাদর্শ তৈরিতে প্রভাব রাখে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গঠিত ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের বিশেষ গেরিলা বাহিনীর অন্যতম প্রধান সংগঠক ও নেতা ছিলেন তিনি। ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ৩৫ বছর বয়সে পার্টির দ্বিতীয় কংগ্রেসে তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
পঞ্চগড়-২ আসনের সংসদ সদস্য ৭ মে ১৯৮৬ – ৬ ডিসেম্বর ১৯৮৭ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সাম্যবাদী আদর্শে সংগ্রামী ও আত্মত্যাগী রাজনৈতিক জীবনে অনেকটা সময় তাকে কারাবন্দি অবস্থায়, রাজদ্রোহ মামলায় নির্যাতিত হয়ে এবং আত্মগোপনে কাটাতে হয়েছে। অসাধারণ বাগ্মী কমরেড ফরহাদের জীবনযাপন ছিল অত্যন্ত সহজ, সরল, সাদামাটা। মানুষের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল হৃদ্যতার। চোখে ছিল সাম্যের সমাজ বিনির্মাণের উজ্জ্বল স্বপ্ন। ১৯৮৭ সালের ৯ অক্টোবর তিনি মারা যান।

১৯৫৪ সালের ১০ জুন দিনাজপুর শহরে রাজনৈতিক কারণে তিনি প্রথমবারের মত গ্রেফতার হন এবং বিনা বিচারে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে তাকে আটক রাখা হয়। এই সময় তার বয়স ১৫/১৬ বছর ছিল। ১৯৫৫ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি মুক্তি লাভ করেন। ঐ বছরই ২৫ জানুয়ারি তাকে পুনরায় গ্রেফতার করা হলে পুলিশের হাত হতে পালিয়ে তিনি আত্মগোপন অবস্থায় থাকেন এবং দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেচে ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলেন। ১৯৫৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তার উপর হতে হুলিয়া ওঠে। ১৯৬২ সালে আইয়ুব খান পুনরায় তার উপর হুলিয়া বাহির করেন। তাকে গ্রেফতার করতে পারলে অনেক টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে সরকার ঘোষণা করে। ছাত্র আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চাপে তার উপর হতে মাত্র তিন মাসের জন্য হুলিয়া প্রত্যাহার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে ১৯৬২ সাল হতে স্বাধীনতা পর্যন্ত জনাব ফরহাদের হুলিয়া থাকে। ১৯৭৭ সালে তাকে গ্রেফতার করে এবং বিনা বিচারে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রাখে। তার আটকাদেশের জন্য সরকারের বিরুদ্ধে হাই কোর্টের মাননীয় বিচারপতিগণ রায় দেন যে, ‘মোহাম্মদ ফরহাদকে বিনা বিচারে আটক রাখা অন্যায় এবং সরকার বেআইনিভাবে তাকে আটক রেখেছে। সরকারপক্ষ মামলায় হেরে যায়। ১৯৮০ সালে তাকে আবার রাজদ্রোহের মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়। ‘বিপ্লব’ ও ‘সরকারকে শক্তি বলে উৎখাতের’ মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়। ১৯৮১ সালে তিনি জামিনে মুক্তি পান। ১৯৮৩ সালে আবার তাকে গ্রেফতার করে এবং ক্যান্টনমেন্ট জেলে ১৪ দিন আটক রাখে।

মোহাম্মদ ফরহাদ ১৯৮৭ সালের ৯ই অক্টোবর রাশিয়ার মস্কো শহরে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

জনপ্রিয়

ক্রিস্টাল আইস ও হেরোইন সহ ১ জন কে গ্রেফতার করেছে বিজিবি

আজ কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদ এর ৩৭ তম মৃত্যু বার্ষিকী

প্রকাশের সময় : ০৬:৪২:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪

কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদের জন্ম পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার জমাদারপাড়া গ্রামে। তাঁর ডাকনাম ছিল বাদল । রাজনৈতিক ছদ্মনাম ছিল কমরেড কবির। তাঁর পিতা আহমেদ সাফাকাত আল বারি ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক। পড়াশোনা করেছেন দিনাজপুর শহরে। ইংরেজি, আরবি, ফার্সি ও উর্দু প্রভৃতি ভাষায় তার দখল ছিল। তার পূর্বপুরুষ শাহ্ বংশীয় পীরে কামেল কদম আলী শাহ্ জলপাইগুড়ি থেকে আগমন করেন । কমরেড ফরহাদরা মোট ৬ ভাই- বোন। তিনি পিতা মাতার মধ্যম পুত্র ও পঞ্চম সন্তান।

তাকে বলা হতো ‘বাংলার লেনিন’। তিনি রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। চল্লিশ দশকের বিশ্ব রাজনীতিতে ঘটে যাওয়া ভারতের স্বাধীনতা, চীনের বিপ্লব এবং ১৯৪৮ সালের দিকে দিনাজপুরের তেভাগা আন্দোলন তার রাজনৈতিক মতাদর্শ তৈরিতে প্রভাব রাখে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গঠিত ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের বিশেষ গেরিলা বাহিনীর অন্যতম প্রধান সংগঠক ও নেতা ছিলেন তিনি। ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ৩৫ বছর বয়সে পার্টির দ্বিতীয় কংগ্রেসে তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
পঞ্চগড়-২ আসনের সংসদ সদস্য ৭ মে ১৯৮৬ – ৬ ডিসেম্বর ১৯৮৭ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সাম্যবাদী আদর্শে সংগ্রামী ও আত্মত্যাগী রাজনৈতিক জীবনে অনেকটা সময় তাকে কারাবন্দি অবস্থায়, রাজদ্রোহ মামলায় নির্যাতিত হয়ে এবং আত্মগোপনে কাটাতে হয়েছে। অসাধারণ বাগ্মী কমরেড ফরহাদের জীবনযাপন ছিল অত্যন্ত সহজ, সরল, সাদামাটা। মানুষের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল হৃদ্যতার। চোখে ছিল সাম্যের সমাজ বিনির্মাণের উজ্জ্বল স্বপ্ন। ১৯৮৭ সালের ৯ অক্টোবর তিনি মারা যান।

১৯৫৪ সালের ১০ জুন দিনাজপুর শহরে রাজনৈতিক কারণে তিনি প্রথমবারের মত গ্রেফতার হন এবং বিনা বিচারে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে তাকে আটক রাখা হয়। এই সময় তার বয়স ১৫/১৬ বছর ছিল। ১৯৫৫ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি মুক্তি লাভ করেন। ঐ বছরই ২৫ জানুয়ারি তাকে পুনরায় গ্রেফতার করা হলে পুলিশের হাত হতে পালিয়ে তিনি আত্মগোপন অবস্থায় থাকেন এবং দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেচে ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলেন। ১৯৫৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তার উপর হতে হুলিয়া ওঠে। ১৯৬২ সালে আইয়ুব খান পুনরায় তার উপর হুলিয়া বাহির করেন। তাকে গ্রেফতার করতে পারলে অনেক টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে সরকার ঘোষণা করে। ছাত্র আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চাপে তার উপর হতে মাত্র তিন মাসের জন্য হুলিয়া প্রত্যাহার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে ১৯৬২ সাল হতে স্বাধীনতা পর্যন্ত জনাব ফরহাদের হুলিয়া থাকে। ১৯৭৭ সালে তাকে গ্রেফতার করে এবং বিনা বিচারে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রাখে। তার আটকাদেশের জন্য সরকারের বিরুদ্ধে হাই কোর্টের মাননীয় বিচারপতিগণ রায় দেন যে, ‘মোহাম্মদ ফরহাদকে বিনা বিচারে আটক রাখা অন্যায় এবং সরকার বেআইনিভাবে তাকে আটক রেখেছে। সরকারপক্ষ মামলায় হেরে যায়। ১৯৮০ সালে তাকে আবার রাজদ্রোহের মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়। ‘বিপ্লব’ ও ‘সরকারকে শক্তি বলে উৎখাতের’ মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়। ১৯৮১ সালে তিনি জামিনে মুক্তি পান। ১৯৮৩ সালে আবার তাকে গ্রেফতার করে এবং ক্যান্টনমেন্ট জেলে ১৪ দিন আটক রাখে।

মোহাম্মদ ফরহাদ ১৯৮৭ সালের ৯ই অক্টোবর রাশিয়ার মস্কো শহরে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।