প্রতিদিন নতুন নতুন আবিস্কার হচ্ছে চিকিৎসা বিজ্ঞানে, আবার নতুন নতুন রোগ জীবাণু সনাক্ত ও চিহ্নিত হচ্ছে প্রতিদিন। রোগ ও প্রতিশোধক এযেনো এক মহা যুদ্ধ যা কোনো দিনই থামার সম্ভাবনা নাই। রোগ হলেই ভোঁদৌড় চিকিৎসক এর কাছে, চিকিৎসক পাঠায় রোগনির্ণয় এর জন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারে, রিপোর্ট দেখে এবং লিখে ঔষধ, ঔষধ কিনতে হয় ফার্মেসীতে, ফার্মেসীতে মেডিসিন সাপ্লাই ও রোগীর প্রেসক্রিপশন এর ছবি তোলার দায়িত্ব হচ্ছে মেডিসিন কম্পানির প্রতিনিধিদের।কি আযব এক পরিক্রমা। উপরের প্রতিটি পয়েন্ট শতভাগ যৌক্তিক এবং প্রয়োজনীয়। কিন্তু ভিতরেই রয়েছে মারাত্মক লেভেলের বিপদ সীমা, চক্রান্ত, রোগীদের নিয়ে মারাত্মক লেভেলের ব্যবসা। খুব গভীর ভাবে পর্যবেক্ষন না করলে আপনি বুঝতে পারবেন না শুধু মাত্র একজন রোগীকে নিয়ে কত বড় সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে।
এখন আমরা বিষয় গুলো বিশ্লেষণে যাই।
চিকিৎসকঃ
চিকিৎসা এমন একটি সেবা মূলক পেশা,যা সম্মান, দোয়া ও মানুষের ভালোবাসায় ভরপুর। একজন চিকিৎসক কে মানুষ এতটাই বিশ্বাস করে যে সেটা উদাহারন দিয়ে বুঝানো সম্ভব নয়, তবে একটি ছোটো উদাহরণ , আপনি রোগ জীবাণু নিয়ে চিকিৎসক এর কাছে গেলেন এবং চিকিৎসক প্রেসক্রিপশন করলো কিছু মেডিসিন যা আপনি কোনো বিবেচনা ছাড়াই খেলেন।চিকিৎসক এর প্রতি এতটাই বিশ্বাস যে আপনি মেডিসিন নিয়ে কখনো চিন্তাই করেন নাই,দিয়েছে খেতে হবে। আপনাকে যা যা পরিক্ষা নিরিক্ষার জন্য দিয়েছে আপনি তাই করেছেন।এতোটাই বিশ্বাস চিকিৎসক এর উপরে।অবশ্য এছাড়া কোনো উপায় নাই।
কিন্তু কিছু কিছু অসাধু চিকিৎসক রোগীদের সাথে যা করে তা হয়তো সুস্থ মানুষের পক্ষে করা সম্ভব নয়।এক মাত্র অসুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের মত অমানবিক নিষ্ঠুর কাজ করে। প্রথমে পরামর্শ ফি নেয়,প্রয়োজন না হলেও ডায়াগনস্টিক সেন্টার কে খুশি করার জন্য দেয় পরিক্ষা বা টেস্ট। যার বেশীর ভাগই প্রয়োজন নাই। কিন্তু শতকরা ৪০% তো নিতেই হবে ডায়াগনস্টিক হতে,টেস্ট না দিলে চেম্বার করতে দিবে না ডায়াগনস্টিক সেন্টার কতৃপক্ষ।
আবার বউয়ের গহনা,বাসার এসি,ছেলের বাইক,আবার একজন বানিয়ে দিচ্ছে বাড়ি তাদের কেউ তো সন্তষ্ট করতে হবে।তার মানে লিখতে হবে মেডিসিন। প্রেসক্রিপশন এর পাতা শেষ হয়ে গেছে পিছনে লিখা শুরু। বেচারা রোগী মুড়ি খাচ্ছে নাকি মেডিসিন বুঝতে পারছে না।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে কি পরিক্ষা বা টেস্ট এর প্রয়োজন নাই,অবশ্যই টেস্টের প্রয়োজন রয়েছে তবে অপ্রয়োজনীয় নয়।
অবশ্যই মেডিসিন এর প্রয়োজন রয়েছে তবে অপ্রয়োজনীয় নয়।
যেটা প্রয়োজন সেটাই হোকনা শুধু মাত্র।
রোগী ও জনগণ একটা বড় সমস্যা সৃষ্টি করে তাহলো পরামর্শ ফি,ধরেন ডক্টর ১ হাজার টাকা পরামর্শ ফি নিয়েছে, কিন্তু টেস্ট দেয় নাই বল্লেও চলে,অপ্রয়োজনীয় মেডিসিন লিখে নাই।রোগীর ৫০০০ হাজার টাকা চিকিৎসক বাচিয়ে দেয়ার পরেও রোগী ও জনগণ বলবে এতো ডাক্টার নয় ডাকাত১০০০ টাক ফি নিয়েছে ।অপর দিকে যদি ৫০০ টাকা ফি নিয়ে ৫০০০ টাকা টেস্ট দেয় তখন কি হতে পারে প্রশ্ন আপনার কাছেই।
তবে চিকিৎসক দের উচিৎ রোগীদের কাছে পরামর্শ ফি ৫০০/১০০০ নিন ডিগ্রি অনুযায়ী, এবং অপ্রয়োজনীয় টেস্ট ও অপ্রয়োজনীয় মেডিসিন লিখা হতে বিরত থাকুন। যা প্রয়োজন তা তো দিতেই হবে।
ডায়াগনস্টিক সেন্টার ; ডায়াগনস্টিক সেন্টার কিন্তু রোগীর পকেট ফাঁকা করার সবচেয়ে বড় মেশিন। এর উপদেষ্টা হচ্ছে চিকিৎসক।
দেশের সকল ডায়াগনস্টিক সেন্টার নিবন্ধিত নয়।দেশের সব ডায়াগনস্টিক সেন্টারে থাকার কথা ডিপ্লোমা বা বিএসসি টেকনোলোজিষ্ট। কিন্তু দেশের বেশীর ভাগ ডায়াগনস্টিক সেন্টার চলে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত দের দিয়ে।ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলো নিজেদের ব্যবসা বৃদ্ধির জন্য শরণাপন্ন হয় অসাধু চিকিৎসক দের। ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসক চেম্বার করার আগেই শর্ত হচ্ছে প্রতি রোগী প্রতি টেস্ট দিতে হবে।চিকিৎসক এর প্রচার প্রচারণা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের, প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে কি পরিক্ষা বা টেস্ট এর প্রয়োজন নাই। অবশ্যই আছে, তবে অপ্রয়োজনীয় নয়। বেশীরভাগ টেস্ট অপ্রয়োজনীয় বলে ধারণা করছে গবেষক দল। চিকিৎসক দের উচিৎ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চেম্বার না দেয়া, ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর উচিৎ নিজ প্রতিষ্ঠান এ ডক্টর চেম্বার করে না দেয়া। ডক্টর যেহেতু টেস্ট করে না সেহেতু, টেস্টের প্রয়োজন হলে আপনার ডায়াগনস্টিক এর শরণাপন্ন এমনিই হবে রোগী রা।যে সব চিকিৎসক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চেম্বার করে তাদের সিংহভাগ অসাধু।
হাসপাতাল/ক্লিনিকঃ বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে মারাত্মক লেভেলের অপচিকিৎসা হয়,এর ভিতরে আপনারা অনেকেই দেখেছেন সুন্নতে খাতনা দিতে শিশুর মৃত্যু। মারা যাওয়ার ২৪ ঘন্টা পরেও রোগী আইসিইউ তে।ইত্যাদি ইত্যাদি। পল্লী অঞ্চল হতেই শুরু করি। বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলে সরকারি হাস্পাতাল ও বেসরকারি ক্লিনিক রোগীদের একমাত্র ভরসা। নিয়মিত সার্বক্ষনিক ডিউটি ডক্টর থাকার নিয়ম থাকলেও, নেই ডিউটি ডক্টর।ক্লিনিক চালায় নার্স আয়া বুয়া ও কতৃপক্ষের কিছু চিকিৎসা অভিজ্ঞতা সম্পন্ন জনবল।এখানে আমি চিকিৎসা অভিজ্ঞ বলেছি,চিকিৎসক বলি নাই। নার্স বলতে ডিপ্লোমা বা বিএসসি করা নার্স নয় এরা। এরা হয়তো শর্ট কোর্স করা। বা আয়া হতে প্রমোশন পেয়ে নার্স হয়েছে।কি অবাগ হচ্ছেন।
এর পরে আসেন অপারেশন কিছু কিছু ক্লিনিকে ডক্টর সিজারিয়ান অপারেশন বা অন্য অপারেশন করলেও সেলাই দেয় ওটি বয়, এমন অভিযোগ রয়েছে শত শত। একজন সার্জারী চিকিৎসক এর উচিৎ নয় কি, অপারেশন শেষে সেলাই সহ যাবতীয় কাজ সমাপ্ত করার পরে ওটি রুম হতে বাহির হওয়া।অপর দিকে কমিউনিটি ক্লিনিক এর কিছু মহিলা কর্মী বা এফ ডাব্লিউ ভি’র কর্মী যারা গাননি রোগী দেখেন, ক্লিনিক কতৃপক্ষের কন্টাক্ট থাকে তাদের সাথে,যেনো নরমাল ডেলিভারি হলেও সেটা সিজারের জন্য ক্লিনিকে পাঠায়, প্রতি রোগীর জন্য বরাদ্দ থাকে কমিশন। আচ্ছা এবার আসুন কে করে অপারেশন বা সার্জারী,অভিযোগ উঠেছে ডক্টর সংকট হলে ক্লিনিক স্টাফ দিয়েই অপারেশন সেরে দেয় অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কতৃপক্ষ। বেশীরভাগ সময় ড্রেসিং করে আয়া বা ক্লিনিক স্টাফ। ঔষধ পত্র কারচুপি’র অভিযোগ তো আছেই। উপরের পয়েন্ট গুলো বিবেচনা করলে কি আপনার এটা মনে হয় না যে রোগীদের শুধু ইনকামের ধান্দায় অপচিকিৎসা চিকিৎসা করা,সেবা বলে কোনো শব্দ এখানে নাই…….
সংষ্কার এমন হতে পারে
★কোনো ডাক্টার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ক্লিনিক,বা কারো অধিনে কোনো চিকিৎসক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করবেনা।চিকিৎসা প্রদান করলে নিজস্ব চেম্বার চিকিৎসা প্রদান করবে। টেস্টের প্রয়োজন হলে রোগী নিজেই ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুঁজে বাহির করবে।
★কোনো ক্লিনিকে রোগী দেখার জন্য চেম্বার করা যাবে না। ডিউটি ডক্টর হিসেবে বেতন ভুক্ত ডিউটি চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে।
★যে চিকিৎসক আল্ট্রাসোনোগ্রাম করে,তারা নিজ চেম্বারে আল্ট্রা করবেন।
★চিকিৎসকগণ অপ্রয়োজনীয় টেস্ট অপ্রয়োজনীয় মেডিসিন লিখা বন্ধ করে রোগীর কাছেই পরামর্শ ফি বাড়িয়ে নিন।
যৌক্তিক তথ্য সহ থাকছে-পর্ব-৩ (সংষ্কার প্রয়োজন ডক্টর ও ঔষধ কম্পানির)