আন্দোলনে মাথায় ৭ গুলি নিয়ে অর্থের অভাবে চিকিৎসা বন্ধ এনামুলের

  • স্মার্ট ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : ০৮:২৭:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০২৪
  • ৪২ বার পঠিত

আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:

কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে যান মো. এনামুল হক (২৫)। এসময় ছাত্রলীগের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে পুলিশের এলোপাথাড়ি গুলি শুরু হয়। তখন এনামুলের মাথায় ও সারা শরীরের প্রায় ৫০টি রাবার বুলেট এসে লাগে।

চিকিৎসা করে সবগুলো বুলেট বের করলেও এখনো মাথায় সাতটি, হাতে একটি ও উরুতে পাঁচটি বুলেট নিয়ে কাতরাচ্ছেন এনামুল। অপারেশনের মাধ্যমে বুলেটগুলো বের করা সম্ভব। তবে প্রচুর টাকা ও ঝুঁকি আছে বলে জানান চিকিৎসকরা। কর্মহীন হয়ে পড়ে থাকা দিনমজুর এনামুলের পক্ষে চিকিৎসার ব্যয় করার সামর্থ নেই।

এনামুক হক ভুরুঙ্গামারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের স্কুলপাড়া গ্রামের মৃত বেলাল হোসেন ও মোছা. আমিনা বেগমের ছেলে। বাবা মারা যাওয়ার পর দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন। ঘরে স্ত্রী ও কন্যা সন্তান, মা আর ভাই বোনের খরচ মেটাতে হিমশিম খাওয়া এনামুলের চোখে এখন হতাশার ছাপ।

এনামুল হক বলেন, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলা শহরে ৪ আগষ্ট শুরু হয় ছাত্র-জনতার আন্দোলন। বিকেলে ছাত্রদের সঙ্গে মিছিলে যোগ দেই। মিছিলটি ভুরুঙ্গামারী থানার সামনে এলে আমাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ। এতে মিছিলে থাকা আমিসহ প্রায় ২০ জন আহত হই। এসময় আমার মাথা, হাত-পা ও পিঠে ৫০টির মতো রাবার বুলেটে লাগে। আহত অবস্থায় বন্ধুরা আমাকে আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে স্থানীয় চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরে আসি।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার তিন-চরদিন পর হঠাৎ আমার মাথা প্রচুর ঝিমঝিম করতে থাকে। রংপুর ইসলামিক কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে বাকি বুলেট বের করি। এখন আমার মাথায় সাতটি বুলেট আছে। হাতে একটা ও উরুতে পাঁচটা আছে। সেগুলো এখনো বের করা যায়নি। ডাক্তার বলেছে সেগুলো বের করতে অপারেশন করতে হবে, অনেক টাকা লাগবে। টাকা তো নাই। তাই অপারেশন করাতে পারছি না।

এনামুল হকের মা মোছা. আমিনা বেগম বলেন, আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর বড় ছেলে এনামুলের দিনমজুরের টাকা দিয়ে সংসার চলতো। আন্দোলনে গিয়ে সে আহত হয়েছে। কাজ করতে পারে না। এখন সংসার চালানোর টাকা নাই। চিকিৎসা করবো কেমনে?

এনামুলের স্ত্রী শিমু আক্তার বলেন, আমার স্বামীর আয় দিয়ে কোনো রকম সংসার চলতো। এখন স্বামী অসুস্থ কাজ করতে পারে না। চিকিৎসা খরচ নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় আছি। কেউ যদি সহযোগিতা করতো তাহলে আমাদের উপকার হতো।

ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. গোলাম ফেরদৌস বলেন, আহত এনামুল হকের বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। ওনাকে অফিস আসতে বলেন বিষয়টি দেখবো।

বিষয় :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

জনপ্রিয়

ক্রিস্টাল আইস ও হেরোইন সহ ১ জন কে গ্রেফতার করেছে বিজিবি

আন্দোলনে মাথায় ৭ গুলি নিয়ে অর্থের অভাবে চিকিৎসা বন্ধ এনামুলের

প্রকাশের সময় : ০৮:২৭:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০২৪

আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:

কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে যান মো. এনামুল হক (২৫)। এসময় ছাত্রলীগের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে পুলিশের এলোপাথাড়ি গুলি শুরু হয়। তখন এনামুলের মাথায় ও সারা শরীরের প্রায় ৫০টি রাবার বুলেট এসে লাগে।

চিকিৎসা করে সবগুলো বুলেট বের করলেও এখনো মাথায় সাতটি, হাতে একটি ও উরুতে পাঁচটি বুলেট নিয়ে কাতরাচ্ছেন এনামুল। অপারেশনের মাধ্যমে বুলেটগুলো বের করা সম্ভব। তবে প্রচুর টাকা ও ঝুঁকি আছে বলে জানান চিকিৎসকরা। কর্মহীন হয়ে পড়ে থাকা দিনমজুর এনামুলের পক্ষে চিকিৎসার ব্যয় করার সামর্থ নেই।

এনামুক হক ভুরুঙ্গামারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের স্কুলপাড়া গ্রামের মৃত বেলাল হোসেন ও মোছা. আমিনা বেগমের ছেলে। বাবা মারা যাওয়ার পর দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন। ঘরে স্ত্রী ও কন্যা সন্তান, মা আর ভাই বোনের খরচ মেটাতে হিমশিম খাওয়া এনামুলের চোখে এখন হতাশার ছাপ।

এনামুল হক বলেন, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলা শহরে ৪ আগষ্ট শুরু হয় ছাত্র-জনতার আন্দোলন। বিকেলে ছাত্রদের সঙ্গে মিছিলে যোগ দেই। মিছিলটি ভুরুঙ্গামারী থানার সামনে এলে আমাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ। এতে মিছিলে থাকা আমিসহ প্রায় ২০ জন আহত হই। এসময় আমার মাথা, হাত-পা ও পিঠে ৫০টির মতো রাবার বুলেটে লাগে। আহত অবস্থায় বন্ধুরা আমাকে আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে স্থানীয় চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরে আসি।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার তিন-চরদিন পর হঠাৎ আমার মাথা প্রচুর ঝিমঝিম করতে থাকে। রংপুর ইসলামিক কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে বাকি বুলেট বের করি। এখন আমার মাথায় সাতটি বুলেট আছে। হাতে একটা ও উরুতে পাঁচটা আছে। সেগুলো এখনো বের করা যায়নি। ডাক্তার বলেছে সেগুলো বের করতে অপারেশন করতে হবে, অনেক টাকা লাগবে। টাকা তো নাই। তাই অপারেশন করাতে পারছি না।

এনামুল হকের মা মোছা. আমিনা বেগম বলেন, আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর বড় ছেলে এনামুলের দিনমজুরের টাকা দিয়ে সংসার চলতো। আন্দোলনে গিয়ে সে আহত হয়েছে। কাজ করতে পারে না। এখন সংসার চালানোর টাকা নাই। চিকিৎসা করবো কেমনে?

এনামুলের স্ত্রী শিমু আক্তার বলেন, আমার স্বামীর আয় দিয়ে কোনো রকম সংসার চলতো। এখন স্বামী অসুস্থ কাজ করতে পারে না। চিকিৎসা খরচ নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় আছি। কেউ যদি সহযোগিতা করতো তাহলে আমাদের উপকার হতো।

ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. গোলাম ফেরদৌস বলেন, আহত এনামুল হকের বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। ওনাকে অফিস আসতে বলেন বিষয়টি দেখবো।