ইয়াবা কি,কি উপাদান দিয়ে তৈরি,মানব দেহে ইয়াবা’র ক্ষতিকর প্রভাবঃ
ইয়াবা এক ধরনের মাদক।যা মানব শরীরের প্রচন্ড ধরনের ক্ষতি করে থাকে। মাদকটির মূল উপাদান মেথঅ্যামফিটামিন। মেথঅ্যামফিটামিন একসময় সর্দি ও নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হতো বেশকিছু দেশে। ব্যবহার করা হতো ওজন কমানোর চিকিৎসায়ও। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ক্লান্তি দূর করতে ও সজাগ থাকতে ব্যবহার হতো মেথঅ্যামফিটামিন। পরবর্তী সময়ে সাধারণ মানুষ ইয়াবায় আসক্ত হয়ে যায়, দীর্ঘযাত্রার গাড়িচালক ও দৌড়বিদেরা এটি ব্যবহার শুরু করেন। সাময়িক সুবিধা পেলেও ইয়াবার ভয়াল থাবায় ধ্বংস হয়েছে অনেক পরিবার ও জীবন।
দীর্ঘমেয়াদে সেবনের ফলে ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া উদঘাটিত হতে থাকায়,এবং মাদক হিসেবে ব্যবহারের কারনে বিশ্বব্যাপী এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হযেছে। তবে বিশ্বের কয়েকটি দেশে এর উৎপাদন – বিক্রি চলমান থাকে। মেথঅ্যামফিটামিনের সঙ্গে ক্যাফেইন মিশিয়ে ব্যবহূত হতে থাকে মাদকদ্রব্য হিসেবে। থাইল্যান্ডে এই মাদকটির উৎপাদন হয় সবচেয়ে বেশি। ছড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশে। গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন, পেথেডিনের পথ ধরে বাংলাদেশেও এখন খুবই সহজলভ্য হয়ে উঠেছে ইয়াবা। ইয়াবা একটি থাই শব্দ বা পাগলা ঔষধ।
শতভাগ নিশ্চিত না হলেও ধারনা করা হয়, ১৯৯৭ সালের দিকে বাংলাদেশে ইয়াবার আবির্ভাব ঘটে। ২০০০ সালের পর থেকে মিয়ানমার সিমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে ইয়াবা।প্রথমে এটি উচ্চ মূল্যের কারনে প্রভাব বিস্তার করতে পারেনাই, দাম সহনীয় পর্যায়ে আসার পরে এখন মাদকের মাঠ দখলে নিয়েছে ইয়াবা।
ইয়াবা আসক্তি মূল কারন হচ্ছে এনার্জি, ইয়াবা সাধারণত মানুষের শরীরে প্রচুর এনার্জি সাপ্লাই দেয়।ইয়াবা সেবনের পরে ক্লান্তি বা ঘুম কোনোটাই আসেনা।এটা যৌনতার জন্য ব্যবহার করে তরুন তরুণীরা।ইয়াবা পরিবহন ও লুকিয়ে রাখা সহজ। ইয়াবা তৈরি করার সময় ভিন্ন ভিন্ন ফ্লেভার মেশানো হয়।এটা আকর্ষণের একটা অন্যতম কারন।প্রথমে এই ইয়াবার ভয়াবহতা বুঝতে না পারলেও এক সময় সেবনকারীর আচরণেই বুঝা যায়।
কিছু কিছু সেবনকারী এটা গড়ম রং চা,গড়ম দুধ, বা গড়ম ঝাল মাংসের সাথে সেবন করে থাকে, কেউ কেউ আবার অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের ওপর রাখা ট্যাবলেটের অপর প্রান্তে তাপ দিয়ে একে গলিয়ে ফেলে। এরপর সেখান থেকে যে বাষ্প বের হয়, তা নিঃশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করে।
ইয়াবা’র প্রভাবে ও রাসায়ানিক প্রতিক্রিয়ার কারনে টানা সাত থেকে ১০ দিনও জেগে থাকার ঘটনা শুনা গেছে। শরীরের ওজন কমতে থাকে, মেজাজ হয় খিটখিটে, গলা-মুখ শুকি প্রচণ্ড ঘাম ঝরে, বৃদ্ধি হয় রক্তচাপ, দেহের তাপমাত্রা আর শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি। দীর্ঘদিনের আসক্ত ব্যক্তিরা উচ্চরক্তচাপের রোগীই হয়ে পড়ে। মস্তিষ্কের ভেতরকার ছোট রক্তনালিগুলো ক্ষয় হতে থাকে, এগুলো ছিঁড়ে অনেকের রক্তক্ষরণ শুরু হয়। স্মৃতিশক্তি কমে যায়, শরীরে নানা রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। মেজাজ খিটখিটে হয়, অহেতুক রাগারাগি, ভাঙচুরের প্রবণতা বাড়ে। পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে উঠে।অনেকেই আত্মহত্যার করে বসে।
ইয়াবার পরিমাণ বাড়ানোর পাশাপাশি আসক্ত ব্যক্তিরা এর ওপর শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। একবার ইয়াবা নেওয়ার নির্দিষ্ট সময় পর আবার না নিলে শরীরে ও মনে নানা উপসর্গ দেখা দেয়, ফলে বাধ্য হয়ে আসক্ত ব্যক্তিরা আবার ফিরে যায় নেশার জগতে।
ইয়াবা সাধারণত হলুদ,সবুজ,লাল, গোলাপি রঙের হয়ে থাকে।ছোটো টার ওজন দশমিক ১০ গ্রাম।ও বড়টির ওজন দশমিক ২০ গ্রাম হয়ে থাকে।
পর্ব-২ এ থাকবে ইয়াবা আসক্তি হতে মুক্তির আলোচনা