একটুকু ছোয়াঁ
কবি : সোহিনী ঘোষ ( কলকাতা )
মোমিন ইসলাম সরকার দেবীগঞ্জ পঞ্চগড় প্রতিনিধি,
আজ জগদ্ধাত্রী পুজো। পাড়ায় পুজো হচ্ছে। মাইক বাজছে। জানালার ধারে একা বসে তিস্তা। মনে পড়ছে সব পুরোনো কথা। তাদের বাড়িতেও পুজো হত। যৌথ পরিবার কত আত্মীয় পরিজন বাড়ি যেন গম গম করত। কত বড় বাড়ি কত ঘর। সব ঘরে আত্মীয়স্বজনে ভরে যেত পুজোর দিনগুলোয়। ক’দিন আগে থেকেই সবাই আসতে শুরু করত। পুজোর বাজার কত আয়োজন কত আলোচনা সব যেন খুব মিস করছে তিস্তা। মন কোথাও বিষণ্ণ হয়ে পড়ছে আবার পরমুহূর্তে ঠোঁটের কোণে আলতো হাসির ঝলক।
ছোটবেলাটা খুব আনন্দে কেটেছিল। কত বড় পরিবার জ্যেঠু কাকুরা তাদের ছেলে মেয়েরা সবার মধ্যে থেকে বড় হয়েছে তিস্তা। পুজোর জোগাড় হুড়োহুড়ি আনন্দ সব মিলিয়ে দিনগুলো খুব আনন্দের ছিল।
আজ আর সেই যৌথ পরিবার নেই। সব দাদা দিদিদের বিয়ে হয়ে সবাই নিজেদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। বাড়িটা এখনও আছে তবে তা তালাবন্দী। কতকাল যে সে যায়নি ওই বাড়িতে। আর যাবেই বা কি, কেউ তো থাকে না। লোক রাখা আছে তারাই দেখাশোনা করে।
গ্রামের সেই বাড়ি থেকে আজ সে বহুদূরে দু-রুমের ছোট ফ্ল্যাটে থাকে। জানালার ফাঁক দিয়ে আকাশটাকে যেন ঠিক করে দেখা যায় না। একরাশ ঠান্ডা বাতাস স্পর্শ করে না শরীর।
ছোট্ট ব্যালকনিটাই সব। একাকীত্বের পরম পাওয়া। ব্যালকনিতে বসে বাইরের আকাশটা একটু দেখা যায়।
সেই ছোট্টবেলায় দৌড়ে বেড়াতো সারা উঠোন। বাড়ির বাইরে গ্রামের রাস্তার ধারে ফাঁকা ফাঁকা জমি কত আলো কত বাতাস।
পুজোর পদ্মফুল ফুটে থাকত, মাঠে ধান – সরষে বাগান কি সুন্দর পরিবেশ। আজ কিছুই নেই। সামনের ব্যালকনিতে হাতে গোনা দুটো ফুলের গাছ।
আজ মাইকে মন্ত্র উচ্চারণ তিস্তাকে নিয়ে যাচ্ছে সেই ছোটবেলায়। কত স্মৃতি তার মনকে নাড়া দিচ্ছে। সে সব ফেলে আসা দিন কত কিছু দিয়েছে। মনে পড়ছে তার অতীত। অঞ্জলি দিতে গিয়ে চোখ পড়ছিল ঝিলমের দিকে। পুজোয় প্রেমে পড়া নতুন পোশাকের গন্ধ আর মায়ের পরশ তিস্তার প্রেমকে গাঢ় করে তুলেছিল।
অঞ্জলীর ফাঁকে চোখ যাচ্ছিল ঝিলমের দিকে। ঝিলমেরও তাই। প্রতিবারই আসতো সবাই সেবারই মাসির বাড়ির দিক থেকে এসেছিল ঝিলম। সারাদিন নতুন নতুন ঝলক উঠছিল তাদের মনে। পরদিন নিরঞ্জন। মন খারাপ। সিঁদুর খেলা। ঝিলম একটু স্পর্শ দিল তিস্তার গালে লাল সিঁদুরের। যেন পরম পাওয়া মনে হচ্ছিল তিস্তার।
প্রেমের পরশ কোথা থেকে কোথায় নিয়ে চলছিল স্বপ্নকে। পূজা পর্ব শেষ এবার ঝিলম ফিরে গেল নিজের বাড়ি। বহুদিন রেশ রয়ে গেল এই স্পর্শের এই প্রেমের। আবার আগামী বছরের প্রতীক্ষা।
এক বছর পর আবার এসেছে ঝিলম। এক বছর যেন অনেকটা ব্যবধান। প্রেমের রেশ ফিকে হয়ে আসছিল যেন। ঝিলম এখন অনেক বড় চাকরি করে। তিস্তায় বেশ বড় হয়েছে। আরো সুন্দরী হয়েছে। পুরোনো প্রেম যেন আবার নতুন করে প্রাণ পেয়েছে। ঝিলমের বাড়ি থেকে সম্বন্ধ আসে বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। বহুদূর পাড়ি দেয় ঝিলম-তিস্তা। দীর্ঘ বছর কেটে গেছে। তাদের সন্তানরা বিয়ে করেছে। তিস্তা এখন এক বৃদ্ধা। ফ্ল্যাটের ঘরের এক কোণে একটা জানালায় বসে মাইকে পুজোর মন্ত্রোচ্চারণ শুনছে আর অতীতের স্মৃতি ভেসে উঠছে। কবেকার সেই পুরোনো কথা মনে পড়ছে। হঠাৎই দরজায় বেল বেজে উঠল। সম্বিৎ ফিরে পেল তিস্তা। ওই বোধহয় মেয়ে এল। পাশের ফ্ল্যাটেই থাকে।