আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:
জমি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের মা, দাদি ও তিন চাচাসহ উভয়পক্ষের কমপক্ষে সাত জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে কুড়িগ্রাম সদরের বেলগাছা ইউনিয়নের সরকারি খাদ্যগুদাম পাড়ায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনার জন্য স্থানীয় বিএনপি দলীয় লোকজনের ইন্ধনকে দায়ী করছে সাদ্দামের পরিবার। তবে প্রতিপক্ষের দাবি, ক্রয় করা জমি ঘিরতে গেলে সাদ্দামের পরিবারের লোকজন বাধা দেন। এতে সংঘর্ষে উভয়পক্ষের কয়েকজন আহত হন। দুই পরিবারের লোকজনের মধ্যে মারামারি, এতে বিএনপির সম্পৃক্ততা নেই।
আহতরা হলেন- সাদ্দামের মা মমেনা বেগম, দাদি জমিলা বেগম, চাচা গফুর মিয়া, জোবেদ আলী ও জহুরুল হক। এ ছাড়াও প্রতিপক্ষের মহির উদ্দিনসহ (৭০) তার এক মেয়ে আহত হয়েছেন। এর মধ্যে সাদ্দামের চাচা জহুরুল হকের অবস্থা গুরুতর। তাকেসহ গফুর মিয়া ও জোবেদ আলীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুরে নেওয়া হয়েছে। বাকিরা কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, ছাত্রলীগ সেক্রেটারি সাদ্দামের মা, দাদি ও চাচাসহ আহতরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। সাদ্দামের মায়ের মাথা ফেটে গেছে, দাদির হাতে ব্যান্ডেজ। চাচাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন। তাদের মধ্যে জহুরুল হকের অবস্থা সংকটাপন্ন। অন্যদিকে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন প্রতিপক্ষের মহির উদ্দিন ও তার এক মেয়ে। তাদের শরীরে আঘাত থাকলেও তা গুরুতর নয়।
সাদ্দামের বড় ভাই বাবলু বলেন, ‘বাড়ির পাশের একটি জমি আমরা কিনে নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে ভোগদখল করে আসছি। একই জমির আরেক দিকে ক্রয় করেন মহির উদ্দিন। কিন্তু তারা আমাদের ভোগ দখল করা অংশ দাবি করে আসছে। এ নিয়ে কয়েক দফা থানায় অভিযোগও দেওয়া হয়েছিল। আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে তারা আমাদের দখলে থাকা অংশ ঘিরে নেওয়া শুরু করে। আমরা বাধা দিলে তারা বাইরে থেকে বিএনপির লোকজন নিয়ে এসে আমাদের ওপর হামলা করে। এতে আমাদের পরিবারের নারী-পুরুষসহ ছয় জন আহত হন।’
সাদ্দামের ভাতিজা রিপন বলেন, ‘স্থানীয় বিএনপির লোকজনকে এনে হামলা করা হয়েছে। তারা সবাই বেলগাছা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাহাবুবুর রহমানের লোকজন।’ হাসপাতালে উপস্থিত স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেও এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
হাসপাতালে ভর্তি প্রতিপক্ষের মহির উদ্দিন বলেন, ‘আমার কেনা জমি। রেকর্ড-খারিজসহ বৈধ কাগজপত্র আছে। কিন্তু দীর্ঘদিন দরে তারা দখল করে রাখছে। থানায় অভিযোগ, দফায় দফায় মিটিং করলেও তারা দখল ছাড়েনি। এতদিন ক্ষমতার দাপটে দখল রাখছে। আজ আমি ও আমার পরিবারের লোকজন আমার অংশ ঘিরতে গেলে তারা বাধা দেয়। এতে মারামারি হইছে।’
বিএনপির লোকজনকে ডেকে আনা প্রসঙ্গে মহির বলেন, ‘আমি চা দোকানি। বিএনপির লোকজন কই পাবো। তারা সবাই আমার পরিবারের লোকজন। সেখানে কোনও বিএনপির লোকজন ছিল না।’
মহিরের পুত্রবধূ মনিরা বেগম বলেন, ‘আমাদের বাড়ির সঙ্গে জমি। তারা এতদিন দখলে রাখছে। রাস্তা পর্যন্ত ব্যবহার করতে দেয়নি। স্বামী রিকশা চালায়। চার মাস ধরে বাড়িতে রিকশা নিতে পারি না। তাদের পায়ে ধরেও ফয়সালা চাইছি, থানায় লিখিত অভিযোগ দিছি। কিন্তু ক্ষমতা দেখিয়ে জমি ছাড়েনি। আজ জমি ঘিরতে গেলে মারামারি হইছে।’
ফোনে যোগাযোগ করলে ছাত্রলীগ সেক্রেটারি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমাদের দখলে আমাদের কেনা অংশ। শুরু থেকেই আমরা ভোগদখল করে আসছি। কিন্তু আজ স্থানীয় বিএনপির লোকজন নিয়ে গিয়ে মহির উদ্দিন আমার পরিবারের লোকজনের ওপর হামলা করে জমি দখলে নেয়। আমার মা-দাদিসহ পরিবারের নারী পুরুষদের ওপর বর্বরোচিত হামলা হয়েছে।’
বেলগাছা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহাবুর রহমান বলেন, ‘জমি দখল নিয়ে দ্বন্দ্বে দুই পক্ষের সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হয়েছে বলে জেনেছি। তাদের মধ্যে কেউ বিএনপির নেই।’
ছাত্রলীগ সেক্রেটারির পরিবারের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা মাহাবুর বলেন, ‘আমিও শুনেছিলাম, বিএনপি কেউ কেউ ছিল। পরে জেনেছি, সেটা সঠিক নয়। কেউ থাকলে আহত হতো। কিন্তু সেটা নেই। এরপরও কারও জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কুড়িগ্রাম সদর থানার ওসি নাজমুল আলম বলেন, ‘৯৯৯-এর মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষের ঘটনায় কোনও পক্ষই সন্ধ্যা পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’