কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:
অবশেষে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম। আগামী ২৫ অক্টোবর গুচ্ছ পরীক্ষার পর ফলাফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবেন। চলতি শিক্ষা বর্ষে, দুইটি অনুষদে ৪০ জন করে মোট ৮০ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন। আরো চারটি অনুষদ অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে কুড়িগ্রাম শহরে দুইটি অত্যাধুনিক আবাসিক ভবন ভাড়া নেওয়া হয়েছে। শ্রেণি কার্যক্রম চালু করতে শ্রেণি কক্ষগুলো ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে প্রশাসনিক ভবনও। বিদেশি অধ্যাপক এখানে স্থায়ীভাবে শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নেবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর জানিয়েছে, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা মালয়েশিয়ার ‘পুত্রা মালেয়শিয়া বিশবিদ্যালয়’-এ ইন্টার্নশিপ করতে পারবেন, ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত সমঝোতা স্বারক চুড়ান্ত সাক্ষরিত হয়েছে।
এছাড়াও কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কোর্সক্রেডিট ট্রান্সফার করে এক বছর পুত্রা মালেয়শিয়া বিশবিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবেন। পুত্রা মালয়েশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নীতিগত ভাবে এ বিষয়ে সম্মত হয়েছেন।
সূত্র জানায়, গবেষণা নির্ভর বিশেষায়িত একটি কৃষি বিশবিদ্যালয় ছাড়াও সম্পূর্নভাবে একটি আবাসিক বিশব্বিদ্যালয় হিসেবে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বিভিন্ন অনুষদের অধীনে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে সংগতি রেখে বিশেষ করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তিগত দিক সংযুক্ত করে কোর্স কারিকুলা ডিজাইন করা হয়েছে।
দেশি-বিদেশি স্বনামধন্য শিক্ষক, গবেষক, সম্প্রসারণ কর্মী, ইন্ডাস্ট্রীসহ সবাইকে যুক্ত করে অ্যাক্রিডেটেশন কাউন্সিলের ফরমেট অনুযায়ী ‘আউটকাম বেসড’ কোর্স কারিকুলাম প্রনয়ণ করা হয়েছে। বিএসসি এজি লেভেলেই ইন্টার্নশিপ দেশে-বিদেশে করার প্রভিশন রাখা এবং শিক্ষার্থীরা ইন্টার্নশিপ করার সময়ে ইন্ডাস্ট্রি, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও কৃষকের মাঠ পর্যায়ে সংযুক্ত করে ডিজাইন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি, গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইন্টার্নশিপ নিয়ে এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত এই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতিমুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সিন্ডিকেটে নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্লেন্ডেড লার্নিং এর মাধ্যমে বিদেশি বিশবিদ্যালয়ের বিশেষ করে স্কটল্যান্ড, মালেয়শিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এডজান্ক ফ্যাকাল্টি হিসেবে কন্সেন্ট নেওয়া হয়েছে।
তাদের পরামর্শ অনুযায়ী, কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক স্টুডিও ক্লাসরুম প্রতিষ্টার উদ্দোগ নেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও, কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আধুনিক কৃষি গবেষণা পল্লী অর্থাৎ কৃষির সকল বিষয়ে ওয়ান স্টপ সলুশন এর জন্য গবেষণার নির্মাণের পরিকল্পনা প্রনয়ণ করা হয়েছে। এখানে মেধাবী শিক্ষক নিয়োগে টপ আট শতাংশ প্রভিশন করে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। বিদেশি ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির বিশেষ উদ্দোগ গ্রহণ করা ছাড়াও গ্লোবাল র্যাংকিং-এর বিষয় বিবেচনায় রেখে সমস্ত ইন্ডিকেট গুলো কন্সিডার করে নীতিমালা প্রনয়ণ করা হয়েছে।
এছাড়াও দ্রুতই ফ্যাকাল্টি অব এগ্রিকালচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট, ফ্যাকাল্টি অব এগ্রিকালচারাল ইকোনমিক্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, ফ্যাকাল্টি অব ফুড সায়েন্স অ্যান্ড নিউট্রিশন, ফ্যাকাল্টি অফ আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স খোলা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাতে কর্মদক্ষ এবং উন্নত বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগীতায় এগিয়ে থাকে সেজন্য চর উন্নয়ন ইনিস্টিউট, উদ্যোক্তা তৈরি করতে ইনস্টিটিউট অব এগ্রিবিজনেস অ্যান্ড এন্টারপ্রেনারশিপ, ইনস্টিটিউট অব ফ্লাডপেইন এগ্রিকালচার, ইন্টার ডিসিপিনারি ইনস্টিটিউট ফর ফুড সিকিউরিটি, ইনস্টিটিউট ফর প্রিসিশন ফার্মিং অ্যান্ড ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার, ইনস্টিটিউট অব ফুড সেফটি অ্যান্ড পোস্ট-হারভেস্ট টেকনোলজি, ইনস্টিটিউট অব ফ্রেশওয়াটার ফিসারিজ রিসার্চ, ইনস্টিটিউট অফ মেরিন ফিশারিজ অ্যান্ড সাসটেইনেবল ইকোনমি খোলার সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. একেএম জাকির হোসেন বলেন, কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এই এলাকার মানুষের একটি স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা ২৫০ একর জমিতে একটি দৃষ্টিনন্দন ক্যাম্পাস গড়ে তোলার জন্য ইতোমধ্যে দুটি ডিপিপি প্রনয়ণ করেছি। ফিজিবিলিটি স্টাডি এর ডিপিপি চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং অন্য ডিপিপি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অগ্রাধিকার সবুজ পতাকায় সংযুক্ত হয়েছে।
উপাচার্য বলেন, কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ সংক্রান্ত আইন যথাযথ ভাবে মেনে ইউজিসি-এর সুপারিশ অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে পদসমূহ পাশ হয়েছে। যথাযথ নিয়ম মেনে অনুমোদিত পদসমূহে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। মেধাবীরা যাতে নতুন এই বিশবিদ্যালটিতে সুযোগ পায় সে ব্যাপারেও পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যাল প্রস্তাবিত সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরি যা ওয়ানস্টপ সলুশন হিসেবে কাজ করবে। এটি প্রতিষ্ঠা হলে বিদেশের মত শিক্ষার্থীদের পার্ট টাইম জব-এর সুযোগ থাকবে।