ঠান্ডা গরম মিষ্টি কিংবা টক কিছু খেলেই প্রচন্ড ধরে,শিরশির করে
বাক্যটি খুবই পরিচিত এবং প্রচলিত একটি সমস্যা যেটি প্রতিনিয়তই শুনতে হয় ডেন্টাল সার্জন দের।
ক্লিনিকাল টার্মে আমরা ডেন্টাল সার্জন’রা একে বলে থাকি “টুথ সেনসিটিভিটি” কিংবা “দাঁতের সংবেদনশীলতা”। কিছু ক্ষেত্রে সহনীয় হলেও দাঁতের শিরশির অনুভুতি অনেকটাই প্রবল হয়ে যেতে পারে।
সাধারণত প্রতিটি দাঁতের কয়েকটি আবরণ থাকে,যার মধ্যে সবচেয়ে বাইরের আবরণের নাম “এনামেল”। এটি খুব দৃঢ় একটি আবরন হলেও কোন কারণে যদি এনামেল ক্ষয় হয়ে যায় তখন তার পরের আবরণটি যার নাম “ডেন্টিন” তা বের হয়ে যায়। আর এই ডেন্টিনে থাকে ডেন্টিনাল টিউব্যুলস্ যার সংবেদন অনুভুতি রয়েছে এবং এটি এক্সপোজ হয়ে যাবার কারনেই ঠান্ডা,গরম খেলে দাঁতে শিরশির করে ওঠে। এর পেছনে কিছু কারণ নিহীত রয়েছে।
কারণ গুলো কি ক
♻️শক্ত ব্রিসেলের টুথব্রাশ ব্যবহার করা: যেসব টুথব্রাশ শক্ত ব্রিসেল যুক্ত,সেগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহারের কারণে এনামেল ধীরে ধীরে ক্ষয় হতে থাকে। একসময় ডেন্টিন বেরিয়ে আসে এবং শিরশিরানি শুরু হয়।
♻️সূক্ষ্ম দানাদার দাঁতের মাজন/কয়লা:
অনেকেই মনে করেন দাঁতের মাজন কিংবা কয়লা দিয়ে দাঁত পরিস্কার করলে দাঁত ভাল সাদা ও পরিস্কার হয়। আসলে এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। এতে এনামেল খুব দ্রুত ক্ষয় হতে থাকে এবং সংবেদনশীলতা বাড়ে।
♻️ব্রাশের ভুল পন্থা : অনেকেই ব্রাশ করার সময় খুব জোরে জোরে ঘষেন এবং মনে করেন অনেক ময়লা পরিস্কার হচ্ছে। এবং বেশ অনেকক্ষণ সময় ধরে ব্রাশ করেন। মুখে ব্রাশ ঘষতে ঘষতে অন্যান্য কাজও করেন। এটি সম্পূর্ণ একটি ভুল পন্থা।
♻️দাঁতে দাঁত ঘষা: এটি দুই রকম অবস্থায় হতে পারে। অনেকের বদঅভ্যাস থাকে দাঁতে দাঁত ঘষা,আবার অনেকে ঘুমের মধ্যে দাঁতে দাঁত ঘষেন। একে “ব্রুক্সিজম অথবা নাইট গ্রাইন্ডিং” ও বলা হয়।
♻️শক্ত খাবার খাওয়া: বিভিন্ন রকমের শক্ত খাবার খাওয়ার কারনেও এনামেল ক্ষয় হতে পারে
♻️ক্যামিকেলযুক্ত/এসিডিক খাবার : এলকোহল অথবা বিভিন্ন বেভারেজ এ এনামেল ক্ষয়ের সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও টক/অম্লজাতীয় খাবার বেশি খেলে এ সমস্যা হতে পারে।
♻️মাড়ির ক্ষয় রোগ: অবহেলা অথবা বয়সের কারনে মাড়ির ক্ষয়রোগ হতে পারে এবং সেখান থেকেও শিরশির অনুভূতি হতে পারে।
♻️দাঁত ভেঙে যাওয়া: দুর্ঘটনাবশত যদি দাঁত ভেঙে যায় তখনও ডেন্টিন বেরিয়ে আসতে পারে এবং শিরশিরানি হতে পারে।
♻️মাউথওয়াশ: দীর্ঘদিন মাউথওয়াশ ব্যবহার করলেও শিরশিরানি হতে পারে।
লক্ষণ
♻️ঠান্ডা,গরম, মিষ্টি বা টক জাতীয় খাবার খেলে দাঁত শিরশির করে ওঠা।
♻️অনেকের ক্ষেত্রে হালকা ব্যাথা অনুভূত হয়।
♻️অস্বস্তিকর অনুভূতি হওয়ায় খাওয়া ও যায়না।
করণীয় কি কি
♻️শক্ত ব্রিসেল এর ব্রাশ ব্যবহার করা যাবেনা। সফট্ ব্রিসেল ব্রাশ ব্যবহার করতে হবে এবং অবশ্যই প্রতি ২-৩ মাস পরপর ব্রাশ পরিবর্তন করতে হবে।
♻️ জোরে জোরে ঘষে ব্রাশ করা যাবেনা। খুব আলতো ভাবে ব্রাশ করতে হবে। ২ মিনিট ব্রাশ যথেষ্ট। এর বেশি প্রয়োজন নেই। দাঁতে উপর নিচ করে ব্রাশ করতে হবে।
♻️কয়লা /মাজন পরিহার করতে হবে। ফ্লুরাইড যুক্ত টুথপেস্ট এক্ষেত্রে আদর্শ।
♻️এলকোহল বা ক্যামিকেল যুক্ত বেভারেজ পরিহার করতে হবে।
♻️দীর্ঘদিন মাউথওয়াশ এর বদলে মাঝেমাঝে হালকা কুসুম গরম পানির সাথে লবণ মিশিয়ে কুলি করা যায়।এটি প্রাকৃতিক মাউথওয়াশ হিসেবে পরিচিত।
♻️বাজারে ডিসেনসিটাইজিং কিছু টুথপেস্ট পাওয়া যায়। টুথপেস্ট আঙ্গুলে কিছু পরিমান নিয়ে মাড়ি ও দাঁতে লাগিয়ে ৩-৫ মিনিট রেখে দিতে হবে।এরপর সঠিক পন্থায় ব্রাশ করে ফেলতে হবে।
♻️অবশ্যই দুইবেলা(সকালে নাস্তার পর ও রাতে ঘুমাতে যাবার আগে সঠিক পন্থায় ব্রাশ করতে হবে)
♻️প্রতি ৬ মাস অন্তর অন্তর একজন দন্ত ও মুখগহ্বর চিকিৎসক এর কাছে রুটিন চেকাপের জন্য যতে হবে।
পরামর্শঃ
ডা.মো.রাসেল(রিয়াদ হোসাইন)
বিডিএস
সিনিয়র দন্ত প্রযুক্তিবিদ
ডিটি,এফটিসিঃরংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
স্পেশাল ট্রেনিংঃ আঁকাবাঁকা উঁচু নিচু ফাঁকা দাত সোজা করন
স্পেশাল ট্রেনিংঃ শিশু দন্ত রোগ
স্পেশাল ট্রেনিংঃ এন্ডোডন্টিক্স রুট কেনাল চিকিৎসা