আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামে তিস্তাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি হ্রাস পেতে থাকায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন তীব্র হয়ে উঠেছে।
উজানের ঢল আর টানা বৃষ্টিতে জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অন্যান্য নদ-নদীর পানি বিপদসীমার নিচে থাকলেও তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে করে তিস্তার দুইপাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে তলিয়ে যায় আমন ধান ক্ষেতসহ বিভিন্ন ফসল। একদিন পর বিপদসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার নিচে নেমে যায় তিস্তার পানি। কিন্তু অন্যান্য নদ-নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম না করায় অববাহিকার ফসলের তেমন ক্ষতি হয়নি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, আকস্মিক বন্যায় আমনসহ ৫০০ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রোপা আমনের ক্ষতি কিছুটা কম হলেও, অন্যন্য ফসলের কিছুটা হবে। ক্ষতি নিরুপণে কাজ করা হচ্ছে।
জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত ৪টি প্রধান নদ-নদীতে পানি হ্রাসের ফলে বিভিন্ন পয়েন্টে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে নদী পাড়ের পরিবারগুলো দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, জেলার উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ, সদরের যাত্রাপুর, রাজারহাটের ঘড়িয়ালডাঙ্গা ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙন তীব্র করেছে। এতে বাসিন্দারা আতংকিত হয়ে ঘর-বাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে।
ভাঙনের মুখে পড়েছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, কমিউনিটি ক্লিনিক, হাট-বাজারসহ বিস্তীর্ণ জনপদ। এরই মধ্যে গত সোমবার উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ব্যাপারি পাড়া এলাকার একটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও খিদেরকুটি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ধরলা নদীতে বিলীন হয়েছে। এছাড়াও অসংখ্য ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে।
ব্যাপারি পাড়া এলাকার আমিনুল ইসলাম জানান, পানি কমার সঙ্গে মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে এ এলাকার ৬০টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছে। আর যারা হুমকিতে আছে, তারা বাড়িঘর সরিয়ে অন্য এলাকায় চলে যাচ্ছে। কেউ স্থায়ী ঠিকানা পাচ্ছে না। এখানকার বাসিন্দা খুব কষ্টে দিন পার করছে।
একই এলাকার ইয়াকুব আলী বলেন, দুই দিনের ভাঙনে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও একটি বন্যা আশ্রয়কেন্দের ভবন ও ৬০টি বাড়িঘর ধরলা নদীতে চলে গেছে। এখানে তীব্র ভাঙন চললেও তা রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখনও ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। বেগমগঞ্জ ইউনিয়নটা ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদ গিলে খাচ্ছে।
ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমারের মোহনায় সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চরযাত্রাপুরে গত দুই দিনে অন্তত ৩০টি বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। হুমকিতে থাকা বাসিন্দারা ঘর-বাড়িসহ গাছপালা অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে।
উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া জানান, একদিকে ধরলা আর আরেক দিকে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে সব কিছু বিলীন হচ্ছে। তার নিজের বাড়িও ভাঙনের কবলে পড়েছে। বার বার বলার পরও পানি উন্নয়ন বোর্ড বা প্রশাসন কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
সদর উপজেলার চর যাত্রাপুরের বাসিন্দা লেবু মিয়া জানান, গত দুই দিনে ৩০টি বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। কেউ কেউ ঘরবাড়ি, গাছপালা সরাতে পেরেছে, আবার কারও কারও অনেক আসবাপত্র, গাছপালা নদীতে চলে গেছে।
তিস্তা নদীর রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ঘর-বাড়ি ও ফসলী জমিসহ গাছপালা বিলীন হয়ে গেছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র তিস্তা, দুধকুমার নদীর ৭টি পয়েন্টে বন্যার পানি সমতলে হ্রাস পাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি হচ্ছে। পানি কমায় এ সব নদ-নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙন শুরু হয়েছে। বিভিন্ন স্থাপনা রক্ষায় ভাঙনরোধে জরুরিভিত্তিতে কাজ করা হচ্ছে।