পুলিশের উপস্থিতিতে আসামিপক্ষ বাদীপক্ষের নারীকে মারধর

আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে মামলার তদন্তে যাওয়া পুলিশের উপস্থিতিতেই বাদীপক্ষের নারীসহ একাধিক সদস্যের ওপর হামলা ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে আসামিপক্ষের বিরুদ্ধে। হামলায় ভুক্তভোগী নারীর পোশাক ছিঁড়ে ফেলারও অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের পুঁটিমারী কাজলডাঙা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

তবে পুলিশের দাবি, তাদের উপস্থিতিতে কোনও হামলার ঘটনা ঘটেনি।

মামলা ও বাদীপক্ষের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েকদিন আগে জেলে সম্প্রদায়ের কাছে চাঁদা দাবি করাকে ঘিরে ওই এলাকার রামচন্দ্র দাস স্থানীয় কয়েক জন যুবকের নাম উল্লেখ করে গত ৫ সেপ্টেম্বর চিলমারী মডেল থানায় মামলা করেন। শুক্রবার সকালে সরেজমিন মামলা তদন্তে কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিয়ে পুঁটিমারী গ্রামে যান চিলমারী মডেল থানার ওসি প্রাণকৃষ্ণ দেবনাথ। ঘটনাস্থলে বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষই উপস্থিত ছিল।

উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে আসামি মাসুদের মা-বোন এবং আরেক আসামি মিলনের স্ত্রীসহ আসামিপক্ষের কয়েকজন নারী পুলিশের উপস্থিতিতেই মামলার বাদী রামচন্দ্র দাসের স্ত্রী চম্পা রানীসহ কয়েক জনকে মারধর করেন।

অভিযোগকারী রাম চন্দ্র দাস বলেন, ‘ওসি স্যার তদন্তে এসে বলেন “মামলা মামলার গতিতে চলবে”। একথা বলার পর আসামি পক্ষের কয়েকজন নারী আমার পরিবারের ওপর হামলা করে। আমার স্ত্রীর পরনের কাপড় ছিঁড়ে ফেলে।’

ভুক্তভোগী এই জেলে বলেন, ‘আমরা জেলে মানুষ। নদীতে মাছ ধরে বিক্রি করে জীবন চালাই। নদীতে মাছ ধরি বলে তার বিনিময়ে আসামিরা প্রতি মঙ্গলবার আমার কাছ থেকে মাছ নেয়, কিন্তু টাকা দেয় না। উল্টো তারা এখন চাঁদা দাবি করছে। আমি এজন্য আইনের আশ্রয় নিছি। কিন্তু আজ পুলিশের সামনে আমার পরিবারকে মারলো। তাহলে আমাদের নিরাপত্তা দেবে কে?’

অভিযোগ অস্বীকার করে আসামি পক্ষের মিলন মিয়া বলেন, ‘আমাদের লোকজন কোনও মারধর করেনি। উল্টো তারা আমার বাড়িতে হামলা করেছে, এসে দেখে যান। রাম চন্দ্রের পরিবার নিজেদের কাপড় নিজেরা ছিঁড়ে ফেলেছে।’

চিলমারী মডেল থানার ওসি প্রাণকৃষ্ণ দেবনাথ বলেন, ‘মামলার তদন্তে গিয়েছিলাম, আমাদের সামনে মারধরের ঘটনা ঘটেনি। ওখানে এলাকার অনেক গণ্যমান্য লোকজন ছিলেন।’

তবে এই প্রতিবেদকের কাছে আসা কিছু স্থিরচিত্রে দেখা গেছে, হামলার শিকার নারী উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের তার পরনে থাকা ছেঁড়া কাপড় দেখাচ্ছেন।’

প্রসঙ্গত, চিলমারীর পুঁটিমারী কাজলডাঙ্গা এলাকার জেলে সম্প্রদায়ের ওপর দীর্ঘদিন ধরে চাঁদা দাবি, বিনামূল্যে মাছ নেওয়াসহ নানারকম নির্যাতনের অভিযোগ চলে আসছে স্থানীয় কিছু যুবকের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি চাঁদা দাবির অভিযোগ করে থানায় মামলা করেন ওই এলাকার জেলে রাম চন্দ্র দাস। মামলায় এজাহারনামীয় আসামিরা হলেন– ওই এলাকার মিলন মিয়া (৪০), নয়ন মিয়া (৩৭), মাসুদ মিয়া (৩০), সুমন মিয়াসহ (৩৫) অজ্ঞাত ৪-৫ জন।

বিষয় :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

জনপ্রিয়

ক্রিস্টাল আইস ও হেরোইন সহ ১ জন কে গ্রেফতার করেছে বিজিবি

পুলিশের উপস্থিতিতে আসামিপক্ষ বাদীপক্ষের নারীকে মারধর

প্রকাশের সময় : ১০:০৬:৫৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে মামলার তদন্তে যাওয়া পুলিশের উপস্থিতিতেই বাদীপক্ষের নারীসহ একাধিক সদস্যের ওপর হামলা ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে আসামিপক্ষের বিরুদ্ধে। হামলায় ভুক্তভোগী নারীর পোশাক ছিঁড়ে ফেলারও অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের পুঁটিমারী কাজলডাঙা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

তবে পুলিশের দাবি, তাদের উপস্থিতিতে কোনও হামলার ঘটনা ঘটেনি।

মামলা ও বাদীপক্ষের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েকদিন আগে জেলে সম্প্রদায়ের কাছে চাঁদা দাবি করাকে ঘিরে ওই এলাকার রামচন্দ্র দাস স্থানীয় কয়েক জন যুবকের নাম উল্লেখ করে গত ৫ সেপ্টেম্বর চিলমারী মডেল থানায় মামলা করেন। শুক্রবার সকালে সরেজমিন মামলা তদন্তে কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিয়ে পুঁটিমারী গ্রামে যান চিলমারী মডেল থানার ওসি প্রাণকৃষ্ণ দেবনাথ। ঘটনাস্থলে বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষই উপস্থিত ছিল।

উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে আসামি মাসুদের মা-বোন এবং আরেক আসামি মিলনের স্ত্রীসহ আসামিপক্ষের কয়েকজন নারী পুলিশের উপস্থিতিতেই মামলার বাদী রামচন্দ্র দাসের স্ত্রী চম্পা রানীসহ কয়েক জনকে মারধর করেন।

অভিযোগকারী রাম চন্দ্র দাস বলেন, ‘ওসি স্যার তদন্তে এসে বলেন “মামলা মামলার গতিতে চলবে”। একথা বলার পর আসামি পক্ষের কয়েকজন নারী আমার পরিবারের ওপর হামলা করে। আমার স্ত্রীর পরনের কাপড় ছিঁড়ে ফেলে।’

ভুক্তভোগী এই জেলে বলেন, ‘আমরা জেলে মানুষ। নদীতে মাছ ধরে বিক্রি করে জীবন চালাই। নদীতে মাছ ধরি বলে তার বিনিময়ে আসামিরা প্রতি মঙ্গলবার আমার কাছ থেকে মাছ নেয়, কিন্তু টাকা দেয় না। উল্টো তারা এখন চাঁদা দাবি করছে। আমি এজন্য আইনের আশ্রয় নিছি। কিন্তু আজ পুলিশের সামনে আমার পরিবারকে মারলো। তাহলে আমাদের নিরাপত্তা দেবে কে?’

অভিযোগ অস্বীকার করে আসামি পক্ষের মিলন মিয়া বলেন, ‘আমাদের লোকজন কোনও মারধর করেনি। উল্টো তারা আমার বাড়িতে হামলা করেছে, এসে দেখে যান। রাম চন্দ্রের পরিবার নিজেদের কাপড় নিজেরা ছিঁড়ে ফেলেছে।’

চিলমারী মডেল থানার ওসি প্রাণকৃষ্ণ দেবনাথ বলেন, ‘মামলার তদন্তে গিয়েছিলাম, আমাদের সামনে মারধরের ঘটনা ঘটেনি। ওখানে এলাকার অনেক গণ্যমান্য লোকজন ছিলেন।’

তবে এই প্রতিবেদকের কাছে আসা কিছু স্থিরচিত্রে দেখা গেছে, হামলার শিকার নারী উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের তার পরনে থাকা ছেঁড়া কাপড় দেখাচ্ছেন।’

প্রসঙ্গত, চিলমারীর পুঁটিমারী কাজলডাঙ্গা এলাকার জেলে সম্প্রদায়ের ওপর দীর্ঘদিন ধরে চাঁদা দাবি, বিনামূল্যে মাছ নেওয়াসহ নানারকম নির্যাতনের অভিযোগ চলে আসছে স্থানীয় কিছু যুবকের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি চাঁদা দাবির অভিযোগ করে থানায় মামলা করেন ওই এলাকার জেলে রাম চন্দ্র দাস। মামলায় এজাহারনামীয় আসামিরা হলেন– ওই এলাকার মিলন মিয়া (৪০), নয়ন মিয়া (৩৭), মাসুদ মিয়া (৩০), সুমন মিয়াসহ (৩৫) অজ্ঞাত ৪-৫ জন।